December 22, 2024, 1:21 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে কুষ্টিয়ার নামটি বারবার উচ্চারিত হবে এই জেলার অগ্রগণ্য ভুমিকার কারনে। এই জেলাকে বলা হয় মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার, স্বাধীনতার প্রথম সূর্যোদয়ের জেলা। কুষ্টিয়ার এ উর্বর ভূমিতে অনেক গুণী মানুষের জন্ম ও পদচারণা হয়েছে। কুষ্টিয়ার ছোট্র উপজেলা খোকসাও পিছিয়ে নেই। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতার স্বপক্ষে এই খোকসা অনেক ভুমিকা রেখেছে।
খোকসা কুষ্টিয়া জেলা জেলা সদর হতে ২৪ কিলোমিটার পূর্বদিকে অবস্থিত ১১৫.৬০বর্গ কিলোমিটার আয়তনের জেলার সবচে ছোট উপজেলা। এর পশ্চিমে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা, উত্তরে ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলা, পূর্বে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা, দক্ষিণে পদ্ম নদী ও ওপাড়ে পাবনা সদর উপজেলা। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ১১০টি গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় ১,৩৪,০১১ জন। উপজেলায় ১৯৪টি মসজিদ ও ৬২টি মন্দির রয়েছে। উপজেলায় ৩৫টি হাট-বাজার রয়েছে। দুটি প্রধান নদী পদ্মা ও এর শাখা গড়াই এ উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত। উপজেলায় রয়েছে ৮৪টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৫টি কলেজ ; এর মধ্যে একটি সরকারী কলেজ। উপজেলায় শিক্ষার হার ৬৯.৮৫ শতাংশ।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে এই উপজেলা থেকে অসংখ্য মুক্তিকামী মানুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। প্রশিক্ষণ শেষে ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে এবং বিভিন্ন সেক্টরের অধীনে যুদ্ধে অংশ নেয়। উপজেলায় সারকারী গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্য ২৫৫ জন।
এসব দিক বিবেচনা করে সম্প্রতি খোকসার কৃতি পুরুষ বাংলাদেশের বর্তমান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী যার বাড়ি এই খোকসাতে এবং যার পিতা মরহুম আব্দুল গফুর মোল্লা মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক, তিনি খোকসাতে মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মৃতি ভাস্বর্য প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা করেন।
এ বিষয়ে তিনি প্রয়োজনীয় নিদের্শনা প্রদান করেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক, দৈনিক কুষ্টিয়া ও কুষ্টিয়া টাইমস এর সম্পাদক ও প্রকাশক ড. আমানুর আমানকে। প্রধান বিচারপতির নির্দেশনায় ড. আমান ভাস্কর্য স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে সম্প্রতি একটি আবেদন করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর আদেশে ভাস্কর্য স্থাপনের নিদের্শনা প্রদান করে স্থান নিধারর্ণ করতে বলা হয়। ড. আমান কথা বলেন খোকসা উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সদর উদ্দিন খানের সাথে। তিনি একটি জায়গা নিধারর্ণ করেন।
মঙ্গলবার সকালে খোকসা উপজেলা চত্বরের পাশে মুক্তিযুদ্ধের ঐ স্মৃতি ভাস্কর্য স্থাপনের জায়গাটি পরিদর্শন করেন ড. আমানুর আমান। এসময় সাথে ছিলেন খোকসার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহি অফিসার ইসহাক আলী, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক, মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হবি, সেতু সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এম এ কাদের, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিশ^জিত সাহা সন্টু, খোকসা প্রেসক্লাব সভাপতি আশরাফুল আলম মুন্সি, সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইদুল ইসলাম প্রবীণ, দৈনিক কুষ্টিয়ার প্রতিবেদক হুমায়ুন কবির।
এসময় ড. আমান সাংবাদিকদের বলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে অসীম ত্যাগ স্বীকারে কুষ্টিয়া জেলায় খোকসা উপজেলা অনন্য। বাঙালী, বাংলাদেশ, মহান মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর আর্দশ ও চেতনা বহনকারী এবং অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তা লালিত এই উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে সুবিধামতো স্থানে একটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য নির্মাণ। এটি বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চল জুড়েই স্বাধীনতার সামগ্রিক আবেদন যেমন ফুটে উঠবে তেমনি বর্তমান তরুণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রবাহিত ও ছড়িয়ে দিতে ভুমিকা রাখবে।
তিনি বলেন সেখানে একই সাথে একটি মুক্তিযুদ্ধ লাইব্রেরী স্থাপনের বিষয়টি নিয়েও কাজ করা যেতে পারে। এটা অনেকেই দাবি করেছেন।
তিনি প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ জানান এ ধরনের একটি উদ্যোগের চিন্তা করবার জন্য।
Leave a Reply